শান্তিনিকেতন
উত্তরায়ণ
শ্রীসুভাষচন্দ্র বসু
কল্যাণীয়েষু,
আগামী কংগ্রেসে তােমাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রকাশ্য সমর্থন করবার জন্য আমার কাছে উপরােধ এসে পৌচেছে। আমার বক্তব্য তােমাকেই জানিয়ে রাখছি। এ সম্বন্ধে আগ্রহ প্রকাশ করে পূর্বেই আমি মহাত্মাজী ও জওহরলালকে চিঠি লিখেছিলেম বােধ হয় জানাে। তারপরে তার ফলের হিসাব রাখা আমার কাজ নয়। যাঁরা কংগ্রেসের চালক তাঁরা বিশেষ উদ্দেশ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে কর্তব্য স্থির করেন — আমি রাষ্ট্রিক সম্প্রদায়ের বহির্ভূক্ত মানুষ, সে উদ্দেশ্য আমার অগােচর, সুতরাং অব্যবসায়ীর ইচ্ছাজ্ঞাপনের বেশি আর কিছু করার অধিকার আমার নেই। দ্বিতীয় কথা, বাংলাদেশের ভাগ্যপরিচালনা কাজে তােমার কাজে তােমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছি — পরস্পর একটা আনাগােনা চলচে। কেউ যদি মনে করে এই ঘনিষ্ঠতার উপলক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কোনাে একটা সুযােগ ঘটানাে চলচে তাতে তােমার অনিষ্টই ঘটবে। আমি চাই অসংকোচে তােমার সঙ্গে যেন যােগ স্থাপন করতে পারি।
আজ বাংলাদেশ দুর্বল। আমার ইচ্ছা কোনাে যােগ্য লােককে বাংলা প্রদেশের সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব দিয়ে নির্বিচারে তার চারদিকে সমস্ত বাঙালিকে সম্মিলিত করা হয়। সেই মিলনে বললাভ করে আর একবার বাংলা আপন শ্রেষ্ঠতা সপ্রমাণ করতে পারবে। নাট্যশালায় তােমাকে সম্বর্ধনার যে সংকল্প করেছি তার মূল কথাটি এই। কংগ্রেসের ভিতর দিয়ে ইচ্ছা আকার নেবে এ ইচ্ছা তার চেয়ে গভীর এবং অকৃত্রিম। এর পরিচয় পেয়েছিলুেম বঙ্গভঙ্গের আন্দোলনে তখন বাংলা নিজের অভিপ্রায়কে যে রকম সম্পূর্ণ শক্তিতে প্রকাশ করেছিল ভারতবর্ষের ইতিহাসে তেমন আর কখনাে ঘটেনি । সেই উপলব্ধিকে আর একবার জাগানাে চাই, এবং প্রচেষ্ঠায় তােমাকেই আশ্রয় করব। আর সকল পথ ছেড়ে এই পথেই প্রবৃত্ত হতে ইচ্ছা করি — এই আমার মনের কথা তােমাকে বললুম।
তুমি এখানে আসতে চেয়ে জেনে খুব খুশি হলুম।
ইতি –
তােমাদের
(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
১৯/১১/৩৯