৩৮/১, এলগিন রােড
৯-৫-২৩

প্রিয় মহাশয়,
বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির আসন্ন সভায় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব নিয়ে আলােচনা হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আপনার কাছে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলি রাখছি। আপনি অনুগ্রহ করে প্রশ্নগুলির উত্তর দিলে বি, পি, সি, সি সদস্যরা এবং জনসাধারণ তাঁদের মতামত গঠনের ক্ষেত্রে উপকৃত হবেন । বলা বাহুল্য, জনস্বার্থে আমি আপনাকে এই অনুরােধ করছি । সংখ্যালঘু দলের সদস্যরা বিভিন্ন সভা – সমাবেশে এবং সংবাদপত্রে প্রচারিত বিবৃতিতে তাঁদের অভিমত স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন। এই প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে এখন আপনার মতামত খােলাখুলিভাবে জানানাে উচিত। সঠিক বিচারের জন্য জনসাধারণ উভয় দলের মতামত জানতে চায়।

(১) মহাশয়ের কি মনে হয়, আইন অমান্য আন্দোলনের সাহায্য ছাড়া ভারতের আমলাতন্ত্রের সঙ্গে রক্ষায় আসা সম্ভব নয়?
(২) যদি আপনার উত্তর নঙর্থক হয়, ‘জনতার দাবী মেটাবার জন্যে আমলাতন্ত্রের ওপর কোন পদ্ধতিতে চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব! এব্যাপারে আপনার মত কী?
(৩) মহাশয়ের উত্তর যদি সদর্থক হয়, আপনার কি মনে হয়, আগামী ছ’ মাসের মধ্যে ব্যাপক আকারে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করার কি কোনাে সম্ভাবনা আছে?
(৪) সত্যিই যদি এরকম কোনাে সম্ভাবনা থাকে, দেশের লােককে আইন অমান্য অভিযানে নামার কাজে কীভাবে প্রস্তুত করা যায়! এব্যাপারে আপনার মত কী?
(৫) যদি তেমন কোনাে সম্ভাবনা না থাকে, আইন অমান্য আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্যে অর্থ ও লােকবল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে দেশের মানুষের কাছে কোনাে আবেদন রাখা কি ঠিক হবে? এই প্রসঙ্গে আপনি কি বলেন?
(৬) এই প্রসঙ্গে আরাে একটি কথা জানতে চাইছি। আপনি কি মনে করেন, ৫০,০০০ স্বেচ্ছাসেবক এবং ২৫ লক্ষ টাকা নিয়ে আইন অমান্য আন্দোলনের কাজে নামা যাবে?
(৭) মহাশয় নিশ্চয়ই জ্ঞাত আছেন যে, এলাহাবাদে গৃহীত প্রস্তাব অনুসারে সংখ্যালঘু দলের সদস্যরা আইন অমান্য আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার পরিবর্তে গঠনমূলক কাজে অংশ নেবেন। কেননা, তাঁদের মতে, নিকট ভবিষ্যতে আইন অমান্য আন্দোলনে যাওয়ার কোনাে সম্ভাবনা নেই।
(৮) মহাশয়ের স্মরণ আছে কি যে, এই বিষয়টি যশােরের সভায় উত্থাপিত হয়েছিল। ওই সভায় সকলের সমর্থন পাওয়ার উদ্দেশ্যে সংখ্যালঘু দল অর্থ ও লােকবল সংগ্রহের। প্রস্তাবটি পাশ করাতে চেয়েছিলেন। ওই সংগ্রহের উদ্দেশ্য আইন অমান্য নয়, গঠনমূলক কর্মসূচী প্রণয়নের কাজকে ত্বরান্বিত করা।
(৯) মহাশয়ের মনে আছে কি সভাপতি হিসেবে ওই প্রস্তাবটি আপনি খারিজ করেছিলেন?
(১০) আপনি যদি এই প্রশ্নের ইতিবাচক উত্তর দেন, মহাশয়ের পক্ষে কি সংখ্যালঘু দলকে দোষ দেওয়া সম্ভব? গয়া কর্মসূচী অনুসারে সংখ্যালঘু দল কি আইন অমান্য আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার জন্যে অর্থ ও লােকবল সংগ্রহের জন্যে যথেষ্ট চেষ্টা করেনি?
(১১) মহাশয়ের হয়ত স্মরণ আছে যে, সংখ্যালঘু দলের একজন সদস্য যশােরে সাবজেকটস কমিটির সামনে একটি প্রস্তাব এনেছিলেন । ওই প্রস্তাবটি ছিল “বাঁচো এবং বাঁচতে দাও” নীতির ভিত্তিতে দুই দলের মধ্যে সমঝােতা আনা।
(১২) মহাশয়, সভাপতি হিসেবে ওই প্রস্তাবটি আপনি খারিজ করেছিলেন না?
(১৩) এই প্রশ্নের উত্তর যদি ইতিবাচক হয়, মহাশয় কি জোর দিয়ে বলতে পারেন যে, সংখ্যালঘু দল সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সঙ্গে একই মন্দিরে পূজার্চনা” করতে আপত্তি তুলেছিল?
(১৪) মহাশয় কি বলতে পারেন যে, অসহযােগী হিসেবে বিভিন্ন সরকারি দফতরের কমোদ্যোগে আমাদের কিছুই করার নেই? বিভিন্ন সরকারি দফতরের মধ্যে পড়ছে ইউনিয়ন বাের্ড, পৌরসভা, লােকাল বাের্ড, জেলা বাের্ড এবং ব্যবস্থাপক পরিষদ।
(১৫) এই প্রসঙ্গে আপনার উত্তর যদি সদর্থক হয় আপনি কী করে আপনার অভিমতের সঙ্গে এই ঘটনাটি মেলাবেন? ঘটনাটি হল, স্বয়ং মহাত্মা গান্ধী বিভিন্ন বাের্ড এবং পৌরসভা দখলের অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। এই অভিপ্রায় অনুসারে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের উল্লেখযােগ্য নেতারা হয় ইতিমধ্যে বিভিন্ন বাের্ডে এবং পৌরসভায় যােগ দিয়েছেন কিংবা যােগ দেবার চেষ্টা করছেন।
(১৬) মহাশয়ের কি মনে হয় এইরূপ ধারণা থাকার ফলে মহাত্মা গান্ধী এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের উল্লেখযােগ্য নেতারা অসহযােগের আদর্শ থেকে দূরে সরে গেছেন?
(১৭) সর্বশ্রী রাজাগােপালাচারী, আনসারি, মােয়াজ্জম আলি, সৈয়দ মাহমুদ এবং শ্রীমতী নাইডু সংখ্যালঘু দলের সঙ্গে নিম্নলিখিত শর্তগুলির ভিত্তিতে যে সমঝােতার সুপারিশ করেছেন, মহাশয় কি তা সমর্থন করেন? শর্তগুলি হল :
ক) কংগ্রেস নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে।
খ) উভয় দলই গঠনমূলক কাজে অংশ নেবে।
গ) উভয় দলই আইন অমান্য আন্দোলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত করার কাজে সক্রিয় ভূমিকা নেবে।
ঘ) দলীয় মতানৈক্য দূর করতে হবে।

(১৮) মহাশয়ের কি মনে হয় সংখ্যালঘু দলের সদস্যদের নিজেদের কংগ্রেস বলে পরিচয় দেবার অধিকার নেই? তাঁরা কি কংগ্রেস ছেড়ে দেবে?
(১৯) সংখ্যালঘু দল যদি সত্যিসত্যিই এই পথে যায়, মহাশয় কি খুশি হবেন?

বিনয়াবনত
সুভাষচন্দ্র বসু