৩৮/২ এলগিন রােড
৯-৮-২৩

মহাশয়,

বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটি আহূত সভা নিয়ে মতবিরােধ দেখা দিয়েছে বলে আমি আশ্চর্য বােধ করছি । সভা ডাকার ব্যাপারে সেক্রেটারি আইনের ধার ধারেননি, এ নিয়ে সংশয়ের কোনাে অবকাশ নেই । বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির ২৩ নং বিধির প্রয়ােগ হয় শুধুমাত্র সাধারণ সভার ক্ষেত্রে । এই ধারা অনুসারে সদস্যরা সেক্রেটারির ইচ্ছার বিরুদ্ধেও সভা ডাকতে পারেন । ২৪ নং বিধিতে যে নিষেধ আছে সেই নিষেধ সভা ডাকা ও সভার অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে প্রযােজ্য নয় । ওই নিষেধের প্রশ্ন উঠতে পারে সেক্রেটারি ও সদস্যদের সভা ডাকার অধিকার নিয়ে । সেক্রেটারি সভার ক্ষেত্রে ‘ডাকা’ শব্দটির মনােমত ব্যাখ্যা দিয়েছেন । ওই ব্যাখ্যানুসারে তাঁর বক্তব্য, ১৫ দিনের ব্যবধানে সভা ডেকে নােটিশ জারি আইনানুগ । তাঁর এই ব্যাখ্যা যথার্থ বলে ধরে নিলেও একথা বলা যেতে পারে, ১৫ আগস্ট সভা ডেকে তিনি যে নােটিশ দিয়েছেন সেই নােটিশ ঠিক ১৫ দিন আগে, অর্থাৎ ৩০ জুলাই জারি করা হয়নি । এই ব্যাখ্যানুসারে ৩১ তারিখের বদলে ৩০ তারিখ এই নােটিশটি দেওয়া উচিত ছিল । সুতরাং ১৫ তারিখের সভাটি বেআইনি, এবং ক্ষমতা – বহির্ভূত বিষয় । ওই মতানুসারে ৩০ তারিখেই সভা ডাকার অধিকার বর্তেছে সদস্যদের ওপর । কিন্তু ওই ব্যাখ্যাটি ‘ উদ্ভট ’ । ২৪ নং ধারায় ‘ডাকা’ শব্দটির প্রকৃত অর্থ ‘অনুষ্ঠান হওয়া’ । নােটিশ জারির প্রশ্ন উঠতে পারে ২৫ নং ধারায়, ২৪ নং ধারায় নয় । বিধিগুলির ব্যাখ্যা খুব স্পষ্ট । ২৩ নং বিধির আওতায়, আমি আগেই বলেছি, শুধুমাত্র বিশেষ সভাগুলি পড়ে । এই ধারায় বলা আছে , তেমন প্রয়ােজন দেখা দিলে সেক্রেটারি স্বেচ্ছায় বিশেষ সভা ডাকতে পারেন । এই ক্ষেত্রে সেক্রেটারির মতই চূড়ান্ত । কিন্তু সেক্রেটারির স্বেচ্ছাচারিতা দমনের প্রশ্ন দেখা দিলে সদস্যরাও সভা ডাকতে পারেন । সভা ডাকার দাবিপত্রে কমপক্ষে ২০ জন । সদস্যের স্বাক্ষর থাকলে সভাপতি তাতে সায় দিতে বাধ্য । এই সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দিয়ে কি সেক্রেটারি সভার মূল উদ্দেশ্যকে বানচাল করে দিতে পারেন ? না, তা পারেন না । এই নির্দেশ ওই বিধির শেষাংশে স্পষ্টভাষায় লেখা আছে । ওই ধারায় একথা বলা আছে , “ সদস্যদের প্রস্তাবিত সভা ডাকতে যদি সেক্রেটারি ব্যর্থ হন, সদস্যরা নিজেরাই সেই সভা ডাকতে পারেন । ” সুতরাং একথা স্পষ্ট, সদস্যদের ইচ্ছানুসারে সেক্রেটারি পনেরাে দিনের মধ্যে এই সভা ডাকতে না পারলে সভা ডাকার অধিকার সদস্যদের হাতে চলে আসে । সদস্যরা তখন নিজেদের উদ্যোগে সভা ডাকতে পারেন । তাই যদি না হয়, “ সদস্যদের ইচ্ছানুসারে ডাকা সভা ” —এই বাক্যটি অর্থহীন হয়ে পড়ে , এবং বিধি – অনুসারে সেক্রেটারির বিরুদ্ধে যাবার যে – অধিকার সদস্যদের আছে , সেই অধিকারেরও কোনাে মানে থাকে না । এই ক্ষেত্রে একথা বলা অনাবশ্যক যে, সদস্যরা নােটিশ জারির পরিবর্তে ( যার কোনাে অর্থ হয় না ) সরাসরি সভায় বসবেন । অবশ্য এই ক্ষেত্রে সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার পনেরাে দিন আগে নােটিশ দেওয়া দরকার । সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতিতে “ সদস্যদের প্রস্তাবিত সভা ” এমন একটি সভা , যেটি পনেরাে দিনের ব্যবধানে অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত । বিষয়টি একটু বিশদ করে জানাচ্ছি । বি , পি , সি , সি’র একজিকিউটিভ কাউন্সিল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে , যিনি ৩১ মে’র পরে কংগ্রেস কমিটির সদস্য হবেন তিনি কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে প্রতিনিধি হিসেবে যােগ দিতে পারবেন না অথবা এইসব প্রতিনিধি নির্বাচনে ভােট । আমাদের মতে এই নিয়মটি ক্ষমতাবহির্ভূত এবং বেআইনী । সুতরাং এই ধারাটিকে সংশােধনের জন্য প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটির সভা ডাকার অধিকার আমাদের আছে । ২৪ নং বিধিতে ‘ ডাকা ‘ শব্দটির অর্থ যদি শুধুমাত্র নোটিশ দেওয়া বােঝায় , সেক্রেটারি এ – কথাও বলতে পারেন যে, প্রস্তাবিত সভাটি কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনের পরে অনুষ্ঠিত হবে । এরকম হলে সদস্যরা অধিকার প্রয়ােগের ক্ষমতা থেকে সম্পূর্ণভাবে বঞ্চিত হবেন । এ – কথা কখনােই বলা যায় না যে , সেক্রেটারি বিধিবহির্ভূতভাবে চলবেন না । তাইনের ধারায় লেখা আছে , সেক্রেটারি বেআইনিভাবে চলতে পারেন , এবং যদি চলেন , তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা । নেওয়া যেতে পারে ! বিকল্প ব্যবস্থা , সদস্যরা এই ক্ষেত্রে সভা ডাকার জনা সেক্রেটারিকে অনুরােধ জানাতে পারেন । এই পরিস্থিতিতে ১৫ আগস্ট তারিখটি ধার্য করা যথার্থ হয়েছে কি , সে প্রশ্নের মধ্যে আমি যাচ্ছি না । সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে ওই তারিখটি যথার্থ কি অযথার্থ , সে – প্রশ্নের সঙ্গে সদস্যদের সভা ডাকার অধিকারবােধের কোনাে সম্পর্ক নেই । সদস্যরা সভা ডেকেছেন ১১ তারিখে । এখন প্রশ্ন উঠতে পারে — এইসব সদস্যরা ১৫ তারিখের সভায় বক্তব্য রাখতে চান না কেন ? প্রশ্নের উত্তরটি খুব স্পষ্ট । নির্বাচনকে এই সদস্যরা বেআইনি বলে মনে করেন, এবং বিশ্বাস করেন, ১৫ তারিখের মধ্যে নির্বাচন শেষ না হলেও নির্বাচন প্রসঙ্গ বেশ জোরদার হয়ে উঠবে । তাছাড়া , বােম্বাইতে এ , আই , সি , সি অধিবেশন হওয়ার পর থেকে সেক্রেটারি এবং পরিষদ যে – ভাবে চলছেন তাতে তাঁদের ওপর আমাদের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে । বি , পি , সি , সি’র সভায় তাঁদের অনেকেই আমাদের মধ্যে এই ধারণা সৃষ্টি করেছিলেন যে, তাঁরা পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন । কিন্তু আজ পর্যন্ত তাঁদের কেউই পদত্যাগ করেননি । কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশনে প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য আইন প্রণয়ন করে জানানাে হয়েছে যে, ৩১ মে’র পরে যাঁরা সদস্যপদ নিয়েছেন , তাঁরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না । অথচ এই বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতি পর্যালােচনা করার জন্য । কয়েকজন ইলেকশন অফিসার স্বেচ্ছাচারীর মতাে এমন কয়েকজনের নাম কেটে দিয়েছেন যাঁরা বি, পি, সি সি’র নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছিলেন । এইসব কারণে বর্তমান একজিকিউটিভের প্রতি আমাদের কোনাে আস্থা নেই । সদস্যরা এখন যদি সভা ডাকার অধিকার প্রয়ােগ করতে বিরত থাকেন, তাঁদের কি সুবিচার পাওয়ার কোনাে নিশ্চয়তা আছে ? সভাপতি সভার তারিখ আরাে পিছিয়ে দিতে পারেন । সভা দিন – পনেরাের জন্য পিছিয়ে দেওয়া যাবে । পরিস্থিতি দেখে মনে হয়, ১৫ আগস্টের আগেই নির্বাচন শেষ হয়ে যাবে । জনসাধারণের অবগতির জন্যে জানাচ্ছি, সেক্রেটারি ১৫ আগস্ট সভার তারিখ স্থির করার সময় ভালভাবেই জ্ঞাত ছিলেন যে, কংগ্রেসের বিশেষ অধিবেশন বসবে আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে । তিনি তখন একথাও জানতেন যে, সদস্যরা সভা ডেকেছেন প্রতিনিধি নির্বাচনের পদ্ধতি সমালােচনা করার জন্য । এই পরিপ্রেক্ষিতে ১৫ আগস্ট সভা ডাকার কারণ হল ওই সভার উদ্দেশ্যকে বানচাল করে দেওয়া । শুধু তাই নয় , তিনি প্রতিনিধি নির্বাচন এমন এক পদ্ধতির সাহায্যে সম্পন্ন করতে চান , যে – পদ্ধতিটি সদস্যদের বিচারে ত্রুটিপূর্ণ এবং আপত্তিকর । পরবর্তীকালে কয়েকজন উদ্যোগী পরিবর্তন – বিরােধী একথাও বলতে পারেন যে , সেক্রেটারির ওই সভা ডাকার কোনাে অধিকার ছিল না । ফলত, ১৫ তারিখের ওই সভাটি বেআইনি । এই বিচারে সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি কি বিধি বহির্ভূত হয়ে যাচ্ছে না ? সদস্যরাই । বা তাদের উদ্দেশ্যকে বিপন্ন হতে দেবেন কেন ? সেক্রেটারির কার্যাবলীর দুটি ব্যাখ্যা আমি দিলাম । দুটি ব্যাখ্যাই এই কথা বলে যে, সেক্রেটারি তাঁর দায়িত্বপালনে সংশয়াতীতভাবে ব্যর্থ হয়েছেন । ৩১ জুলাই সেক্রেটারির ওই নােটিশ দাখিল করার আগেই সভা ডাকার অধিকার বর্তেছে সদস্যদের ওপর । ১১ আগস্টের সভাটি আইনসম্মত , এবং ১৫ আগস্টের সভাটি বেআইনী । অতএব আমি বি, পি, সি, সির সদস্যদের অনুরােধ করছি , তাঁরা যেন ১১ আগস্টের সভায় যােগ দেন ।

সুভাষচন্দ্র বসু