যুব – আন্দোলনের আদর্শ ও লক্ষ্য
১৬ জুলাই ১৯২৮ অ্যালবার্ট হলে ছাত্র সংগঠন সমিতির উদ্যোগে সভায় প্রদত্ত ভাষণ ।
বর্তমান যুগে সমগ্র পৃথিবী ব্যাপিয়া তরণ আন্দোলন আরম্ভ হইয়াছে । শুধু বর্তমান যুগে কেন- যুগের পর যুগ যখনই কোনাে জাতির জীবন মরণ সংকট উপস্থিত হইয়াছে , তখনই এই আন্দোলন দেখা দিয়াছে ।
তরণ – আন্দোলনের স্বরুপ
প্রকৃতপক্ষে তরণ – আন্দোলন বলিতে যে – কোনাে তরুণের আন্দোলনকেই বুঝায় না । তরুণদের আন্দোলনের একটা বৈশিষ্ট্য আছে , লক্ষ্য আছে । যেখানে এই বৈশিষ্ট্য ও লক্ষ্য ফুটিয়া উঠিয়াছে , সেখানেই তরণ – আন্দোলন আরম্ভ হইয়াছে বঝিতে হইবে । তরণ – আন্দোলনের উদ্দেশ্য সৃষ্টি করা । সাহিত্য , শিল্পকলা , ধর্ম , সমাজ , রাষ্ট্র প্রভৃতি জীবনের প্রত্যেক বিভাগেই নিত্য নতন সষ্টি করা তরণ – আন্দোলনের লক্ষ্য । যেখানেই এই সন্টি , সেখানেই প্রকৃত জাগরণ ।
জাতির পুনর্জন্ম
মানুষের জীবনে যেমন— জাতির জীবনেও তেমনই শৈশব , যৌবন , বার্ধক্য ও মৃত্যু আছে । অনেক সময় জাতি ধরাপৃষ্ঠ হইতে বিলুপ্ত হইয়া যায় ; আবার অনেক সময় জাতি বাঁচিয়া আছে , কিন্তু তাহার আত্মা মরিয়া গিয়াছে , এরপও দেখা যায় । জাতির জীবনে এই উত্থান – পতন , জন্ম – মত্যু চিরকাল ঘটিয়া আসিতেছে । Evolution of Civilisation ‘ নামক পুস্তকে প্রন্থকার জাতি – জীবনের এই মৌলিক নিয়মটি প্রতিষ্ঠা করিতে চেষ্টা করিয়াছেন । তিনি দেখাইয়াছেন সভ্যতা মরিয়া যায় , কিন্তু আবার তাহার পুনর্জন্ম হইয়া থাকে । ভারতবর্ষের কথা চিন্তা করিলেও এই প্রশ্ন আসে আমরা কি প্রকৃতপক্ষে বাঁচিয়া আছি ? ইহার উত্তরে আমি বলিব , আমরা অনেকবার মরিয়াছি , এবং অনেকবার পুনর্জন্ম লাভ করিয়াছি । পৃথিবীতে যত সভ্যতা আবির্ভুত হইয়াছে , তাহার অনেক বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে । ব্যবিলন , পালেস্টাইন , মেসােপােটামিয়া , প্রভৃতি দেশের প্রাচীন সভ্যতা আজ ধরাপৃষ্ঠ হইতে মুছিয়া গিয়াছে । মিশর প্রভৃতি দুই-একটি জাতি এখনও বাঁচিয়া আছে বটে, কিন্তু তাহাদের প্রাচীন সভ্যতা একরূপ বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে। সুখের বিষয়, আজ মিশরের সভ্যতা আবার জাগিয়া উঠিতেছে, রোম ও গ্রীসে আবার নুতন সভ্যতা গড়িয়া উঠিতেছে।